শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মোটা চাল ৫২ টাকা কেজি!

মোটা চাল ৫২ টাকা কেজি!

স্বদেশ ডেস্ক:

দেশে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে প্রতি মাসেই দফায় দফায় বেড়েছে চালের দাম। কখনও সরবরাহ সংকট আবার কখনও ধানের দাম বেশি- এমন অজুহাতে চালের দাম বাড়িয়েছে মিলাররা। তারা গত তিন মাসে মাঝারি ও সরু চালের প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) বাড়িয়েছে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা।

এতে রাজধানীসহ সারা দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দরে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। যার ঘানি টানছে সাধারণ মানুষ। বাজার পরিস্থিতি এমন হয়েছে, খুচরা বাজারে গরিবের মোটা চালের কেজি এখন ৫২ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এতে খেটে খাওয়া মানুষের মাথায় হাত পড়েছে।

পাশাপাশি খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সরু চাল সর্বোচ্চ ৬৭ ও মাঝারি চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। তিন মাস আগে যথাক্রমে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৫৭ ও ৫০ টাকা। যা স্মরণকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাড়তি টাকা খরচ করে চাল কিনতে ভোক্তার রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠেছে। তবে চালের দামের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি থামাতে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই সরকারের সংশ্লিষ্টদের। তারা এক রকম নির্বিকার।

সোমবার মিল পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরু চালের মধ্যে প্রতি বস্তা মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৩০০০ টাকা। যা তিন মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২৪০০ টাকা। সে ক্ষেত্রে তিন মাসের ব্যবধানে প্রতি বস্তায় দাম বাড়ানো হয়েছে ৬০০ টাকা। পাশাপাশি মাঝারি আকারের চালের মধ্যে বিআর-২৮ জাতের চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ২৬০০ টাকা। যা তিন মাস আগে ছিল ২০০০-২০৫০ টাকা। আর মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা চাল বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২১৫০-২২০০ টাকা। যা তিন মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২০০০ টাকা।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, সরকারি গুদামে চালের মজুদ কমছে হু-হু করে। গত বছর এ সময় সরকারি গুদামে চাল ছিল সাড়ে ১০ লাখ টন। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টন চাল মজুদ আছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার প্রথম ওয়েভে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত সহায়তা চলমান আছে। এতে সরকারি গুদামে চালের মজুদ কমায় মিলাররা কারসাজি করছে।

খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম যুগান্তরকে বলেন, আমন চাল সংগ্রহে মিলারদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও আমরা তাদের চাল দেয়ার সুযোগ খোলা রাখব। তারপরও যদি তারা সরকারকে চাল না দেয় তাহলে চাল আমদানি করে প্রয়োজন মেটানো হবে। ইতোমধ্যে ভারত থেকে ১ লাখ টন চাল আমদানির বিষয়ে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আশা করি দাম কমবে।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, করোনার মধ্যে সরকারের উচিত নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তা সহনীয় করা। বিশেষ করে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তিনি বলেন, করোনার প্রথম ওয়েভে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে।

এখন পর্যন্ত সহায়তা চলমান আছে। সেটা ভালো ও প্রশংসনীয়। যদিও এতে সরকারি গুদামে চালের মজুদ কমেছে। আর এই সুযোগে কতিপয় অসাধু চালের দাম বাড়িয়েছে। তাই সরকারের উচিত, সরকারি গুদামে মজুদ বাড়িয়ে ও বাজার তদারকি করে চালের দাম কমিয়ে আনা। এতে ভোক্তার স্বস্তি ফিরবে।

বাজার তদারকি সংস্থা- জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, হঠাৎ করেই বাজারে চালের দাম বেড়েছে। অধিদফতরের পক্ষ থেকে মহাপরিচালকের নির্দেশে কঠোরভাবে তদারকির করা হচ্ছে। তদারকির সময় পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা দাম বাড়ানোর পেছনে মিলারদের দোষ দিচ্ছেন। আমরাও বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। অনৈতিকভাবে দাম বাড়ানো হলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।

রাজধানীর সর্ববৃহৎ চালের পাইকারি বাবুবাজার, বাদামতলী ও কারওয়ান বাজার ঘুরে ও পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৩০৫০-৩১০০ টাকা। যা তিন মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২৬০০ টাকা। বিআর-২৮ চাল বিক্রি হয়েছে ২৭০০ টাকা। যা তিন মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২৪০০ টাকা। আর স্বর্ণা জাতের চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ২২০০ টাকা। যা তিন মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২১৫০ টাকা।

রাজধানীর নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ও জিনজিরা বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি মিনিকেট ও নাজিরশাইল বিক্রি হয়েছে ৬২ থেকে সর্বোচ্চ ৬৭ টাকা। যা তিন মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫৫-৫৭ টাকা। বিআর-২৮ চাল বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা। যা তিন মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫০ টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০-৫২ টাকা। যা তিন মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকা।

রোববার কথা হয় কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল বিক্রেতা মো. সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এ বছর করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে (মার্চ মাসের শেষে) মিলাররা নানা অজুহাতে চালের দাম বাড়িয়েছে। কখনও সরবরাহ সংকট, কখনও শ্রমিক নেই মিল বন্ধ আবার কখনও ধানের দাম বেশি এ করেই চালের দাম বাড়াচ্ছে মিলাররা। তারা বছরের শেষ সময় এসেও চালের দাম বাড়িয়েই যাচ্ছে। সর্বশেষ তিন মাসের ব্যবধানে কেজিতে মিল পর্যায়ে ৫০ কেজির বস্তায় সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ চাল কল মালিক সমিতির একজন নেতা যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে ধানের দাম অনেক বেশি। প্রতি মণ ১২০০ টাকার ওপরে কিনতে হচ্ছে। যে কারণে চাল উৎপাদনেও খরচ বেড়েছে। আর এই খরচ অবশ্যই মিলাররা তাদের নিজ পকেট থেকে ভর্তুকি দেবে না। তিনি জানান, এবার আমন ফলন ভালো হয়নি। কৃষকরা যে ধান ফলিয়েছেন তারা তা বাড়তি দরে বিক্রি করছেন। যে কারণে চালের দাম বেড়েছে।

নয়াবাজারে চাল কিনতে আসা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, চালের দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না। প্রতি মাসেই বিক্রেতারা চালের দাম বাড়িয়েই যাচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই। কারণ আর কিছু না খেয়ে বাঁচলেও বাঙালিদের ভাত খেতে থাকতে হয়। আয় কোনো মতেই বাড়েনি বরং চাল কিনতে যদি বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। কাউকে বোঝাতেও পারছি না, ভেতরে ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

মালিবাগ কাঁচাবাজারে কথা হয় চাল কিনতে আসা দৈনিক হাজিরাভিত্তিক শ্রমিক মকবুলের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, বাড়িতে আমি, মা-বাবা, বউ ও দুই মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। প্রতিদিন ২০০-৪০০ টাকা আয় হয়। আবার কোনোদিন হয় না। এমন পরিস্থিতিতে ৫০ টাকার ওপরে চাল কিনতে একেবারে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়তি। সঙ্গে বাড়ি ভাড়াও দিতে হয়। এমনভাবে পণ্যের দাম বাড়লে না খেয়ে মরতে হবে। তাই সরকারের প্রতি তার আবেদন, আর যাহোক খাদ্যপণ্যের দাম যাতে গরিবের নাগালে আসা তার একটা ব্যবস্থা করা।

একই বাজারে কথা হয় পিঠা বিক্রেতা আমেনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, কি খেয়ে বাঁচব? চালের দাম অনেক বেড়েছে। ৫২-৫৩ টাকা দিয়ে যদি এক কেজি চাল কিনতে হয়, তাহলে অন্য সব পণ্য কেনার টাকা থাকে না। করোনায় কেউ এখন পিঠাও কিনে না। আয় নেই।

তারপরও ঘরের সবার খাবার জোগাতে হয়। আর এই খাবার জোগাতে বাজারে এলেই খুব অসহায় লাগে। সবকিছুর দাম অনেক। কি করে খাবার কিনে বাসায় যাব তা ভাবছি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877